হাওযা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, সর্বোচ্চ নেতার আন্তর্জাতিক বিষয়ক দপ্তরের উপপ্রধান হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন কোম্মী বলেছেন: ইমাম খোমেনি (রহ.) ছিলেন এমন একজন মহান নেতা যিনি বিশ্বজুড়ে মানবগঠন ও একটি আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক মতবাদ প্রতিষ্ঠার সূচনা করেন।
তিনি কোম শহরের ইমাম কাজিম (আ.) মাদ্রাসায় আয়োজিত ‘হাওযায়ে এলমিয়া কুম’-এর পুনঃপ্রতিষ্ঠার শতবার্ষিকী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ‘হাওযা ও আন্তর্জাতিকতা’ বিষয়ক বিশেষ কমিশনে বক্তৃতা করেন। তিনি বলেন, আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ইসলামী আলেমগণ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সক্রিয়ভাবে উপস্থিত রয়েছেন। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার হাওযার ফকীহ ও আলেম দাওয়াতি কাজে নিয়োজিত।
তিনি জানান, প্রায় ৫০ হাজার আলেম ও ছাত্র বিদেশে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কাজ করছেন এবং তাঁরা মরজায়ে তাকলীদের পক্ষ থেকে মাসিক ভাতা পাচ্ছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত বহু সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ইঙ্গিত করে যে শিয়া চিন্তাধারা কতটা বিস্তৃতভাবে কার্যকর।
তিনি বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক মিডিয়া, ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম, ইসলামি রেডিও-টেলিভিশনের ঐক্যজোট, মাজহাবের ঐক্য ও ধর্মীয় সংলাপ, গবেষণা ও শিক্ষা—সব ক্ষেত্রেই হাওযার সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে, যা আসল ইসলামের মৌলিক প্রয়োজন থেকে উৎসারিত।
তিনি জোর দিয়ে বলেন: ইসলাম একটি পরিপূর্ণ, সর্বজনীন এবং চূড়ান্ত ধর্ম। তাই হাওযার আন্তর্জাতিক রূপরেখা এর স্বাভাবিক পরিচয়—যদি এটি না থাকে, তাহলে হাওযা তার মূল দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত হয়। এই আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি যেন হাওযার ‘অক্সিজেন’। আর এই রূপরেখা কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য নয়—পুরো হাওযাকে এতে অংশ নিতে হবে। এমনকি ছাত্রদের লিখিত গবেষণাগুলোও যেন আন্তর্জাতিকভাবে প্রকাশযোগ্য হয়, তা বিবেচনায় নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন: শত বছর আগে আয়াতুল্লাহ হায়রি কিছু ছাত্রকে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন। আয়াতুল্লাহ বুরুজার্দি চেয়েছিলেন হাওযার শিক্ষার্থীরা সেই সময়ের অনুপাতে রাজনৈতিক ও দার্শনিক চিন্তাধারায় দক্ষ হয়ে উঠুক। কিন্তু ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর মতো আন্তর্জাতিক চিন্তাধারাসম্পন্ন ফকীহ শিয়া ইতিহাসে কেউ ছিলেন না। তিনি হয়তো কোনো স্কুল বা লাইব্রেরি নির্মাণ করেননি, কিন্তু এমন মানুষ তৈরি করেছেন যারা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, ইতিহাস দ্বারা তৈরি হয়নি। তিনি গোরবাচভকে লেখা তাঁর ঐতিহাসিক চিঠির মাধ্যমে তৎকালীন শাসনব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন।
তিনি বলেন: পূর্ব ও পশ্চিমের ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতার শিবিরের বিপরীতে ইমাম খোমেনি (রহ.) কুরআনিক মর্যাদার ভাষ্য বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করেন। তিনি তাঁর সাংস্কৃতিক ‘সফট পাওয়ার’-এর মাধ্যমে একটি ঐতিহাসিক ও আন্তর্জাতিক দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেন।
হুজ্জাতুল ইসলাম কোম্মি স্মরণ করিয়ে দেন: আন্তর্জাতিক দায়িত্ব ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি শুধু হাওযার কোনো বিশেষ অংশের পরিচয় নয়, বরং সব মুবাল্লিগ ও শিক্ষার্থীদের পরিচয়। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা ও সমন্বয় অপরিহার্য।
শেষে তিনি বলেন: আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অংশগ্রহণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—সেখানে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য হতে হবে অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত ও সুপরিকল্পিত।
তিনি আরও বলেন: আজকের দিনে, ধর্মবিরোধী নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, বিশ্বজুড়ে ধর্মের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, ইসলাম ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মে পরিণত হবে।
আপনার কমেন্ট